বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
আমফানে বিপর্যস্ত বাংলার পাশে পুরোপুরিই থাকবে কেন্দ্রীয় সরকার। পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুধু তাই নয়, বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে এক হাজার কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য অগ্রিম দেওয়ার কথাও ঘোষণা করে দিলেন তিনি। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক হাজার কোটি টাকার সাহায্য চেয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীকে বাংলায় এসে বিপর্যস্ত অঞ্চল ঘুরে দেখার জন্য বলবেন বলেও জানিয়েছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সেই মন্তব্যের কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী বাংলায় আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার সকালেই দিল্লি থেকে বিশেষ বিমানে কলকাতায় চলে আসেন প্রধানমন্ত্রী। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, দীর্ঘ ৮১ দিন পর তিনি সরকারি ভাবে কোনও সফরে এই প্রথম দিল্লি থেকে বাইরে কোথাও গেলেন! কলকাতা বিমান বন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তার পরই তিনি হেলিকপ্টারে রওনা হয়ে যান বিপর্যস্ত এলাকা দেখতে। তাঁর সঙ্গে যান রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীও। এ ছাড়া অন্য একটি হেলিকপ্টারে ছিলেন চার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, দেবশ্রী চৌধুরি, ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং প্রতাপচন্দ্র সারেঙ্গি।
আকাশপথে বিপর্যস্ত দুই ২৪ পরগনা দেখার পর চলে আসেন বসিরহাটে। বসিরহাট কলেজে তিনি একটি প্রশাসনিক বৈঠক করেন। বৈঠকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের দুই কেন্দ্রীয়মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরি। এ ছাড়াও দিল্লি থেকে আসা আরও দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং প্রতাপচন্দ্র সারেঙ্গিও বৈঠকে যোগ দেন। সেখানে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, রাজ্যের এই বিপর্যয়ে কেন্দ্রীয় সরকার পুরোপুরি পাশে থাকবে। দ্রুত কেন্দ্রীয় টিম রাজ্যে এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করবে। ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে কেন্দ্র পুরোপুরি সাহায্য করবে। এ ছাড়া এখনই বিপর্যয়ের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে রাজ্যকে এক হাজার কোটি টাকা দেবে কেন্দ্র। বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ঘোষণা করেন।
পাশাপাশি তিনি এ কথাও জানান, যাঁরা আমফানের জন্য মারা গিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিপর্যয় মোকাবিলা ফান্ড থেকে তাঁদের পরিবারকে এককালীন ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। আর যাঁরা আহত হয়েছেন তাঁদের দেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা করে। প্রধানমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, ‘গোটা দুনিয়া এখন এক ভয়ঙ্কর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে দেশের সামনে এখন আরও একটি বিপদ ঘটিয়ে গিয়েছে ঘূর্ণিঝড়। একদিকে করোনা পরিস্থিতি, অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড়, দুইয়ের মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলা লড়াই করছে। এর পরেও যতখানি পাশে থাকা যায়, তার পুরোপুরিই কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাকে পাশে থেকেই সাহায্য করবে।’
শুধু সরকার নয়, গোটা দেশই আজ বাংলার পাশে রয়েছে বলে এদিন তিনি জানান। বাস্তবিকই দেশ যে বাংলার পাশে রয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে শুক্রবার। বাংলার অবস্থা দেখে চোখে জল এসে গিয়েছে বলে এদিন জানান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে বিস্তারিত কথা বলেন। আমফান বিপর্যয়ের পর এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। এমনকী, শোনা গিয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। এ ছাড়া, আবার এদিনই ছিল বাংলায় নবজাগরণের পুরোধা রাজা রামমোহন রায়ের জন্মদিন। সে কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘এমন মহান মানুষের জন্মদিনে আমি বাংলায় আসতে পেরে গর্বিত বোধ করছি।’
এদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘এখন রাজনীতির সময় নয়। আমরা চাই, এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাকে পুরোপুরি সাহায্য করুক। রাজ্যেরও উচিত, এ ক্ষেত্রে নিজেদের কর্তব্য পালন করা।’ পাশাপাশি এদিন তিনি প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ক্ষতিপূরণের টাকা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হাতে সরাসরি যায়, সেই বিষয়টির ওপর কেন্দ্র লক্ষ্য রাখে। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিলে ভালো হয়।